রাজকীয় সব ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে নিউইয়র্কে গেলেন জাপানের রাজকুমারী

সাধারণ এক পরিবারের সন্তানের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেওয়া জাপানের রাজকুমারী মাকো যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবন শুরু করছেন। রোববার নতুন জীবনসঙ্গী কেই কোমুরোকে নিয়ে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে করে নিউইয়র্কের উদ্দেশে টোকিও ছেড়েছেন তিনি।

রাজকীয় মর্যাদা, পদবী ও সম্পদ সব ছেড়ে দীর্ঘদিনের প্রেমিক কেই কোমুরোর সঙ্গে অসাধারণ এক প্রেমকে গত ২৬ অক্টোবর পরিণয়ে রূপ দেন জাপানের রাজকুমারী ও দেশটির বর্তমান সম্রাটের ভাতিজি মাকো। সাবেক এই রাজকুমারী ও তার প্রেমিক কোমুরোর বয়স বর্তমানে ৩০ বছর। রোববার টোকিওর হানেদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সামনে দিয়ে নিউইয়র্কের উদ্দেশে এএনএর একটি ফ্লাইটে দেশ ছেড়েছেন মাকো।

বিমানবন্দর থেকে মাকো-কোমুরোবাহী বিমান উড়তেই হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এ সময় শত শত সাংবাদিক বিমানবন্দরে অপেক্ষায় থাকলেও তাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি এই দম্পতি। তবে পুলিশ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের সেখানে ঘিরে রেখেছিলেন।

জাপানের আইন ও দেশটির রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী, পরিবারের কোনো নারী যদি সাধারণ ঘরের কাউকে বিয়ে করেন, সেক্ষেত্রে তাকে রাজকীয় পদ-পদবি ও মর্যাদা ছাড়তে হয়। তবে রাজপরিবারের পুরুষদের ক্ষেত্রে এই আইন কার্যকর নয়। গত মাসে রাজপরিবারের এই সদস্যের বিয়ে দেশটির সাধারণ নাগরিক ও বিশ্ব গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে।

২০১২ সালে টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কোমুরোর সঙ্গে পরিচয় হয় মাকোর, সেখান থেকে প্রেম। ২০১৭ সালে তারা আংটি বদল করেন এবং তার পরের বছর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ২০১৮ সালে বিয়ে হয়নি তাদের। তার প্রধান কারণ— কোমুরোর পরিবারের আকস্মিক আর্থিক সংকট।

এদিকে, কোমুরোর পরিবারের আর্থিক সংকট ও রাজপরিবারের এই ঘটনা নিয়ে জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলোর অতি আগ্রহের কারণে তীব্র মানসিক চাপজনিত সমস্যা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হন মাকো।

জাপানের রাজপরিবারে অবশ্য রাজকুমারী মাকোই প্রথম নন, যিনি এ ধরনের মানসিক সমস্যায় পড়েছিলেন। তার এক ফুপু, প্রিন্সেস মাসাকোও এই মানসিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেছেন। পুত্র সন্তান জন্ম দিতে পারছেন না— এজন্য পরিবারের সদস্যদের দ্বারা মানসিক চাপের শিকার হয়েছিলেন মাসাকো।

জাপানের পত্রপত্রিকাগুলো প্রচার করছিল, কোমুরোর আর্থিক সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে এবং ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য কোমুরোর মা তার সাবেক প্রেমিকের কাছ থেকে অর্থ ধার করেছেন। পরে অবশ্য পরে জাপানের রাজপ্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানায়, বিয়ে পেছানোর সঙ্গে কোমুরোর মায়ের অর্থনৈতিক সংকটের কোনো যোগসূত্র নেই।

বিয়ের পর দেশটির ক্রাউন প্রিন্স আকিশিনো এবং ক্রাউন প্রিন্সেস কিকো তাদের মেয়ে মাকোর প্রথম পাসপোর্ট হাতে পান; যাতে তিনি কোমুরোর সাথে নিউইয়র্কে যেতে পারেন। নিউইয়র্কের একটি আইন সংস্থায় কাজ করেন কোমুরো।

জাপানের রাজপরিবারের ইতিহাসের প্রথম নারী সদস্য হিসেবে প্রথা ভেঙে একজন সাধারণ মানুষকে বিয়ে করেছেন মাকো।